শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

বগুড়ায় পোস্ট অফিসের কার্যালয় থেকে মরদেহ উদ্ধার 

বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়ায় পোস্ট অফিসের কার্যালয় থেকে মরদেহ উদ্ধার 

বগুড়ার সাতমাথায় অবস্থিত পোস্ট অফিস থেকে প্রশান্ত কুমার আচার্য (৪৩) নামের এক অফিস সহায়কের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৪ এপ্রিল) বগুড়ার প্রধান পোস্ট অফিসের কার্যালয় থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। 

মৃত প্রশান্ত কুমার আচার্য শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া উত্তরপাড়ার প্রাণকৃষ্ণ আচার্যের ছেলে। বগুড়া প্রধান ডাকঘরের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে ঈদের ছুটিতে নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহতের ছোট ভাই গোবিন্দ আচার্য্য ডাকঘরের অভ্যন্তরে একটি দোকান পরিচালনা করেন। সোমবার (২৪ এপ্রিল) তিনি ডাকঘরে পৌঁছে তার ভাইকে ডাকতে গিয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে গোবিন্দ থানায় সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় তার ছোট ভাই গোবিন্দকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাতি করার চেষ্টায় এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। 

নিচতলায় ভল্টের তালা কাটার চেষ্টা করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে, আশা করছি খুব শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যাবে।’ এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই পরেশ আচার্য বলেন, ‘পোস্ট অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে কোনো ঝামেলা থেকেই আমার ভাই খুন হয়েছে। ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। হত্যার ঘটনা চাপা দিতেই ডাকাতির নাটক সাজানো হয়েছে।’

পুলিশ জানান, ডাকঘরের পূর্ব পাশের বারান্দার মেঝেতে পাতানো নিজের বিছানায় প্রশান্তের মরদেহ পড়ে আছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও কাপড়ের ছেড়া অংশ দিয়ে ডান হাত বাঁধা ছিল। দুর্বৃত্তরা ভেতরে ঢুকে ট্রেজারি শাখার বিভিন্ন ফাইলপত্র তছনছ করেছে। তারা ইলেকট্রিক ড্রিল মেশিন দিয়ে ভল্টের দরজায় ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ৪ ইঞ্চি প্রস্থ করে কেটে ফেলে। কাটা ওই অংশ দিয়ে তারা ভল্টের পুরো দরজা খোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। 

ঘটনা জানার পর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা সেখান থেকে বিভিন্ন আলামতও সংগ্রহ করেন। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা নিহত অফিস সহায়ক প্রশান্তের সহযোগিতায় ভেতরে প্রবেশ করে। শুরুতে দেয়াল টপকে ডাকঘর চত্বরে প্রবেশ করলেও ভবনের ভেতরে ঢুকতে তাদের কোনো দরজা কাটতে বা তালা ভাঙতে হয়নি। 

এছাড়াও প্রশান্ত যেখানে বিছানা করে শুয়ে ছিলেন, সেখানকার কলাপসিবল গেটে তালা দেয়া ছিল। দুর্বৃত্তরা যেসব ইলেকট্রিক সামগ্রী ব্যবহার করে ভল্ট কাটার চেষ্টা চালায় তার আলামত দেখে পুলিশের ধারণা, আগে থেকেই তারা রেকি করে গেছে। তাছাড়া ডাকঘরের সিসিটিভির ক্যামেরাগুলো আগে থেকেই নিস্ক্রিয় করা ছিল। তবে একটি ক্যামেরায় একজন দুর্বৃত্তকে মুখোশ পরা অবস্থায় ডাকঘরের ভেতরে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া কিছু সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে।

বগুড়া প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার রাকিব বিশ্বাস জানান, ঈদের ছুটির কারণে ডাকঘরে কর্মরত তিনজন মুসলিম নৈশপ্রহরী জাহিদুল, বকুল এবং সাইফুল ছুটিতে ছিলেন। এ কারণে অফিস সহায়ক প্রশান্ত এবং তার সাথে এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল (ইডি) কর্মচারী মিন্টু দায়িত্বে ছিলেন। গত রোববার রাতে মিন্টু ডিউটিতে যোগ দেননি এবং তার ফোনও বন্ধ রয়েছে। পোস্টমাস্টার বলেন, সামান্য কিছু টাকা-পয়সা খোয়া যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে হিসাব মিলিয়ে বিস্তারিত জানাতে সময় লাগবে। 

এদিকে, নিরাপত্তা এবং ঘটনা অনুসন্ধান করতে পোস্টমাস্টার ছাড়া অন্য কাউকে ডাকঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। এ কারণে ঈদের ছুটির পর সোমবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত ডাকঘরের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে, পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ঘটনাটি ডাকাতির চেষ্টা। দুর্বৃত্তরা ভল্টের কিছু অংশ কাটলেও টাকা কিংবা মূল্যবান কিছু নিতে পারেনি। পুলিশের একাধিক দল জড়িতদের শনাক্তে মাঠে নেমেছে। নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়কের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

টিএইচ